লেখক I প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর আলম I [email protected]
টেকসই উন্নয়ন কি?
উন্নয়ন হতে হবে এমন যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা পূরণের ক্ষমতা বজায় রেখে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা পূরণ করে। তাহলে এটাকে টেকসই উন্নয়ন বলা যাবে। টেকসই উন্নয়ন হতে হবে দুর্যোগ সহনশীল, দীর্ঘস্থায়ী (টেকসই), পরিবেশবান্ধব, স্বনির্ভর প্রযুক্তি সংবলিত। যেমন, বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ভবন নির্মাণে যদি ভূমিকম্পসহনশীল ডিজাইন করা না হয় তাহলে এটাকে দুর্যোগ সহনশীল উন্নয়ন বলা যাবে না।
আধুনিক, টেকসই ও উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে আর্কিটেক্ট, প্ল্যানার এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়ন একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। আমাদের সমস্যা, আর্থ-সামাজিক অবস্থা ইত্যাদি বিবেচনায় এনে আমাদের টেকসই উন্নয়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে দুর্যোগকালীন ঝুঁকি কমাতে হবে, দুর্যোগে টিকে থাকার সামর্থ্য বাড়াতে হবে।
টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি কমাতে হবে। নতুন স্থাপনা নির্মাণ ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। নির্মাণ মানেই পরিবেশ দূষণ। কারণ, নির্মাণ সামগ্রী উৎপাদন, পরিবহণ এবং স্থাপনের জন্য প্রচুর পরিমান গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হয় যা আমাদের একমাত্র গ্রহ পৃথিবীর ঊষনায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ দূষণে ভূমিকা রাখে। একটি স্থাপনা যদি বিশ বছর টিকে থাকে তাহলে একশ বছরে তা ৫ বার নির্মাণ করতে হবে। বিপরীতে, ঐ স্থাপনা যদি ১০০ বছর টিকে থাকে তাহলে ১ বার নির্মাণ করলেই হবে। ৫ বার নির্মাণ মানে ৫ গুণ বেশী পরিবেশ দূষণ। সুতরাং পরিবেশের ক্ষতি কমাতে, পৃথিবীকে উষনায়ন থেকে রক্ষা করতে টেকসই নির্মাণের বিকল্প নেই।
বাংলাদেশে ভূমিকম্প ছাড়াই বিল্ডিং হেলে যায়, রানা প্লাজার মত হৃদয় বিদারক দুর্ঘটনা ঘটে। এসব মাথায় রেখে, আমাদের প্রয়োজন, ইঞ্জিনিয়ার, আর্কিটেক্ট এবং প্ল্যানাররা মিলে একযোগে কাজ করা যাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় এবং টেকসই উন্নয়নে ভূমিকা রাখা যায়। দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ইঞ্জিনিয়ার, আর্কিটেক্ট এবং প্ল্যানার এর মধ্যে যোগাযোগ, মতবিনিময় এবং সহযোগিতার বিকল্প নেই।

ঝুঁকি প্রশমন কি? (risk reduction)
ঝুঁকি প্রশমন হল যে কোনো অস্থায়ী বা স্থায়ী পদক্ষেপ যা মানুষ ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কমায় বা দূর করে। ঝুঁকি কম হলে ক্ষতি কম হয় এবং দুর্যোগ থেকে দ্রুত পরিত্রাণ পাওয়া যায়। যেহেতু প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলি অধিকতর বিপজ্জনক এবং নিয়মিত হয়ে উঠছে, সেহেতু ঝুঁকি প্রশমন কার্যক্রম একটি জাতিকে দুর্যোগ সহনশীলতার দিকে পরিচালিত করে। ঝুঁকি প্রশমনে দুর্যোগ ঘটার আগে তার সম্ভাবনা যাচাই করে তার জন্য পূর্ব প্রস্তুতি নেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পূর্ব প্রস্তুতির একটি কাজ হলো বিদ্যমান স্থাপনাগুলো ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট করে তা রেট্রোফিটিং (মেরামত ও শক্তিশালীকরণ) করা। পূর্ব প্রস্তুতির আরেকটি কাজ হলো নতুন স্থাপনা তৈরিতে বিল্ডিং কোড বা অন্যান্য কোডসহ সবকিছু মেনে সঠিকভাবে ডিজাইন এবং কনস্ট্রাকশন নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে, প্ল্যানার, আর্কিটেক্ট, ইঞ্জিনিয়ার, স্থানীয় সরকারগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীর সম্পৃক্ততা বাদ দেয়া যায় না।


আর্কিটেক্টের ভূমিকা
যে কোন স্থাপনার উপযোগিতা যেমন প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন শৈল্পিকতা, পরিবেশবান্ধব, ঐতিহ্য, নান্দনিকতা, ব্যতিক্রম এবং সৃষ্টিশীলতা। আর্কিটেক্টরা এসবকিছুর কারিগর। আর্কিটেক্টের ছোঁয়ায় স্থাপনা হয়ে ওঠে অনন্য। ভূমিকম্পসহ সব ধরনের দুর্যোগ সহনশীল স্থাপনা ডিজাইনে আর্কিটেক্টের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপরও কিছু জ্ঞান থাকতে হয় যা তাদের ডিজাইনকে পরবর্তী উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম।
পরিকল্পনাবিদ বা প্ল্যানারের ভূমিকা
প্ল্যানাররা পরিবেশের ভৌত রূপ, অর্থনৈতিক ফাংশন, ভবিষ্যৎ চাহিদা, পরিবেশ সংরক্ষণ, রাষ্ট্রীয় মূলনীতি, মানুষের মৌলিক চাহিদা এবং সামাজিক প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে নগর পরিকল্পনা করেন। প্ল্যানারের কাজের সাথে আর্কিটেক্ট এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের ইনপুট থাকলে দুর্যোগ সহনশীল, বসবাসযোগ্য, পরিবেশবান্ধব নগর পরিকল্পনা করা সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে একজন আরেকজনের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। প্রতিযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করে সহযোগিতামূলক মনোভাব ধারণ করলে সবাই মিলে টেকসই উন্নয়নে ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে। যেহেতু নগর পরিকল্পনা প্রকৌশল, স্থাপত্য, এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক সবকিছুর উপর নির্ভর করে, এটি বিভিন্নভাবে একটি প্রযুক্তিগত পেশা, রাজনৈতিক ইচ্ছা এবং জনগণের অংশগ্রহণমূলক একটি প্রচেষ্টা। নগর পরিকল্পনা উন্মুক্ত ভূমির উন্নয়ন (“গ্রিনফিল্ড সাইট”) এবং শহরের বিদ্যমান অংশগুলির পুনরুজ্জীবন উভয় বিষয় নিয়ে কাজ করে। যেমন, রাজধানী ঢাকা এবং তার আশপাশের এলাকার ড্যাপ (ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান) রিভাইস করার সময় প্রতিটি এলাকার ভিতরের মাটির স্তরসমূহের গঠন, বন্যা প্রবণতা, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ইত্যাদি বিবেচনা নিতে গেলে যে সমস্ত তথ্য দরকার হয় তা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের ভূমিকা
টেকসই উন্নয়নের অংশ হিসেবে ভূমিকম্পসহনশীল ভবন ডিজাইনের ক্ষেত্রে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের উচিত আর্কিটেক্টের সাথে কোর্ডিনেশনের মাধ্যমে ভূমিকম্পসহনশীল বিল্ডিং ডিজাইনে তাদেরকে সহযোগিতা করা। এক্ষেত্রে আর্কিটেক্টদেরও উচিত নান্দনিকতার পাশাপাশি দুর্যোগ সহনশীলতাকে গুরুত্ব দিয়ে ডিজাইনে সম্ভাব্য পরিবর্তন সাধন করে এগিয়ে যাওয়া।


চিত্রঃ রিবার কাপলারের মাধ্যমে রডের ল্যাপিং পরিহার।
কলাম সাইজ
বাংলাদেশের মাটির স্তরসমূহের প্রকৃতি, ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পদ্ধতি, ভূমিকম্প উৎপত্তিস্থল থেকে দূরত্ব সব মিলিয়ে সাইজমিক ডিটেইলিং সর্বোচ্চ স্তর ডি ক্যাটাগরি অ্যাপ্লাই করতে হয়। এতে কলামের সর্বনিম্ন সাইজ ১৬” করা লাগে। এর বিকল্প হিসেবে শিয়ার ওয়াল দিয়ে ডিজাইন করলে কলামের সর্বনিম্ন সাইজ ১২” করা যায়, যদিও খরচ সামান্য বাড়ে। কিন্তু, শিয়ার ওয়ালগুলো বিল্ডিং এক কোনায় না দিয়ে মাঝখানে অথবা চারিদিকে এমনভাবে সাজাতে হয়ে যাতে সিমেট্রি বজায় থাকে। qlearn.com.bd তে আর্কিটেক্টদের জন্য ২ টি কোর্স আছে যাতে এসব বিষয় বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া আছে। কোর্স দুটি হল – Quality control of RCC building construction এবং Structural Engineering for Architects.
জয়েন্ট শিয়ার চেক
বেশির ভাগ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার জয়েন্ট শিয়ার চেক না দিয়ে স্ট্রাকচারাল ডিজাইন সম্পন্ন করতে দেখা যায়, যা ভূমিকম্প সহনশীল ভবন নির্মাণে প্রতিবন্ধক। অতীতে বিশ্বব্যাপী বেশির ভূমিকম্পে দেখা গেছে বীম-কলাম জয়েন্টে ফেইল করার মাধ্যমে বিল্ডিং ধসে পড়ে। তাই, জয়েন্ট শিয়ার চেক না দিয়ে স্ট্রাকচারাল ডিজাইন করলে এত এত অর্থব্যয়ে নির্মিত ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ থেকে যাবে।
টরশনাল ইরেগুলারিটি (torsional irregularity check)
কলাম, বিম এবং শিয়ার ওয়ালের পজিশন, সাজানো ঠিকমতো না হলে ভূমিকম্পের সময় ভবন মোচড় খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে যা স্ট্রাকচারাল অ্যানালাইসিস প্রোগ্রাম দিয়ে চেক দেয়া যায়। এটা চেক দিয়ে, কলাম এবং শিয়ার ওয়ালের পজিশন এবং সাজানো এমনভাবে করতে হবে যাতে ভবন মোচড় না খায়। এতে ভবন ভূমিকম্প সহনশীল হওয়ার পাশাপাশি রডের খরচ ও কম হয়। উভয় অক্ষরে সাপেক্ষে সিমেট্রি রক্ষা করে শিয়ার ওয়ালা সাজালে টর্শনাল ইরেগুলারিটি হয় না।
রডের মাটাম
রডকে শেষ প্রান্তে ৯০ ডিগ্রি কোণে বাকানোকে মাটাম বলে। বীম-কলাম জয়েন্ট যেখানে গিয়ে বিম শেষ হয় সেখানে বীমের সবগুলো রডকে ৮-১২” মাটাম করতে হয়। ১৬ মিলিমিটার ডায়া রডের জন্য ৮ ইঞ্চি, ২০ মিলিমিটারের জন্য ১০ ইঞ্চি এবং ২৫ মিলিমিটারের জন্য ১২ ইঞ্চি মাটাম করতে হয়। এটা বেশিরভাগ সাইটে ঠিক মত করা হয় না যা ভূমিকম্প সহনশীল ভবন নির্মাণে বড় প্রতিবন্ধক। এটা করা কষ্টসাধ্য হলেও তা আবশ্যক। এর বিকল্প হিসেবে এঙ্কর কাপলার ব্যবহার করা যেতে পারে যা নির্মাণকাজকে সহজ এবং ভূমিকম্পসহনীয় করে।
লিকুইফ্যাকশন
সিল্ট এবং বালি মাটি পানির লেভেলের নিচে থাকলে, ভূমিকম্পের সময় কম্পনে মাটি-পানি মিলে তরল পদার্থের মত নরম হয়ে যায়। একে লিকুইফ্যাকশন বলে। এতে ভূমিকম্পের সময় মাটির ভারবহন ক্ষমতা থাকে না। পাইলকে সাইড থেকে ধরে রাখতে পারে না। ১২-২০ ইঞ্চি ডায়ামিটারের পাইলগুলো এসব মাটিতে উপযুক্ত নয়। লিকুইফ্যাকশন অ্যানালাইসিস করে পাইলের ব্যাস নির্ধারণ করলে বড় ব্যাসের কম সংখ্যক পাইল দিয়ে ফাউন্ডেশন ডিজাইন করলে ফাউন্ডেশন হবে ভূমিকম্প সহনীয় এবং সাশ্রয়ী। অন্যথায় অর্থের অপচয় হবে কিন্তু ভবন ভূমিকম্পসহনীয় হবে না। যেমন, বসুন্ধরা বারিধারা প্রজেক্ট এবং জলসিড়ি আবাসন প্রজেক্ট এ সমস্যা রয়েছে।
প্রিকাস্ট ড্রিভেন পাইলের সমস্যা ও সমাধান
পাইল আগে থেকেই বানিয়ে রেখে শক্ত হওয়ার পর চাপ দিয়ে অথবা হ্যামারিং করে মাটিতে ঢুকানো হলে এটাকে প্রিকাস্ট ড্রিভেন পাইল বলে। এখন পিএইচসি পাইল (PHC pile) নামে একপ্রকার রাউন্ড পাইল রেডিমেইড কিনতে পাওয়া যায় যার ভিতরে ফাঁপা থাকে। প্রিকাস্ট পাইলের বড় সুবিধা হলো পাইলের কোয়ালিটি ১০০% নিশ্চিত করা যায়। কোয়ালিটি খারাপ হলে ড্রাইভ করার সময় ভেঙ্গে যায়। এক্ষেত্রে ভাঙ্গা পাইল বাতিল করে নতুন পাইল করা যায়। প্রিকাস্ট পাইলের বড় অসুবিধাগুলো নিচে তুলে ধরা হলো।
– লম্বা পাইল দরকার হলে জয়েন্ট দিতে হয়। ঠিকমতো জয়েন্ট দিয়ে এ সমস্যা সমাধান করা যায়।
– লম্বা পাইল হলে পাইলের ডায়ামিটার বা সাইজ বাড়াতে হয় যা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। এক্ষেত্রে স্লেন্ডার পাইল হিসেবে এ পাইল ভূমিকম্পের সময় ফেইল করতে পারে।
– ভূমিকম্পের সময় বালি মাটির লিকুইফ্যাকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে প্রিকাস্ট পাইল স্লেন্ডার কলামের মত ফেইল করে। তাই এক্ষেত্রে বড় সাইজের সিটু পাইল করা উচিত।
ডিজেল হ্যামার দিয়ে প্রিকাস্ট পাইল যে কোন গভীরতায় ঢুকানো যায়। কিন্তু, শহর এলাকায় অথবা আশেপাশে স্থাপনা বা বিল্ডিং থাকলে ডিজেল হ্যামারের মাধ্যমে যে কম্পন বা ভাইব্রেশন তৈরি হয় তাতে ঐসব স্থাপনা ভেঙ্গে পড়তে পারে অথবা ফাটল ধরতে পারে। এই কারণে ডিজেল হ্যামার ব্যবহার করা যায় না।
হাইড্রলিক পুশ পাইল ড্রাইভিং মেশিন দিয়ে কোন ধরনের ভাইব্রেশন ছাড়া পাইল ড্রাইভ করা যায় তবে যত গভীরতায় নেয়া প্রয়োজন তা অনেক সময় সম্ভব হয় না। অথচ প্রয়োজনীয় লোড ক্যাপাসিটি পাওয়া যায় কম গভীরতায় পাইল ঢুকানোর মাধ্যমে। এতে আপাত দৃষ্টিতে কোন সমস্যা নাই মনে হলেও ভূমিকম্পের সময় বালি মাটি লিকুইফ্যাকশন হওয়ার কারণে লোড ক্যাপাসিটি কমে যায় এবং বিল্ডিং ধসে পড়তে পারে।
ম্যানুয়াল হ্যামার দিয়ে পাইল বেশী গভীরতায় প্রবেশ করানো যায় না অথচ ভাইব্রেশনের কারণে আশেপাশের স্থাপনার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং ম্যানুয়াল হ্যামার ব্যবহার করা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না।
প্রিকাস্ট পাইলের সীমাবদ্ধতা দুর করার জন্য পাইল বেইস গ্রাউটিং (pilebasegrouting.com.bd) কাজে লাগানো যেতে পারে। প্রিকাস্ট পাইল বানানোর আগে পাইলের ভিতরে পাইপ রেখে দিতে হবে। পাইল ড্রাইভ করে পরবর্তীতে পাইল বেইস গ্রাউটিং করে পাইলের তলার মাটিকে আরো শক্ত করা যায় যা ভূমিকম্পের সময় লিকুইফ্যাকশন হবে না।
সিটু পাইলের সমস্যা ও সমাধান
মেশিন দিয়ে মাটির ভিতরে গভীর গর্ত তৈরি করে তার ভিতরে রডের খাঁচা ঢুকিয়ে তারপর কনক্রীট ঢালাই করে সিটু পাইল তৈরি করা হয়। এই পাইল যে কোন ডায়ামিটার বা সাইজ এবং গভীরতা করা যায়। সিটু পাইলের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো দেশীয় উইন্স মেশিন এবং ট্রিপড দিয়ে ভাল কোয়ালিটির পাইল করা অত্যন্ত কঠিন। ভালো টেকনিশিয়ান এবং লেবারের অভাবে সিটু পাইলের কোয়ালিটি নিয়ন্ত্রণ সহজ নয়। পাইলের কনক্রীট ঢালাইয়ের আগে পাইলের তলায় নরম কাদা এবং বালি জমার কারণে, পাইলের তলার মাটির ভারবহন ক্ষমতা খুবই কম হয়ে থাকে।
বেনটোনাইট স্লারি হলো এক প্রকার আঠালো কাদা এবং পানির মিশ্রন। সিটু করার সময় বেনটোনাইট স্লারি ব্যবহার না করলে পাইলের গর্ত বা বোরিং এর শেইপ ঠিক থাকে না, সাইডের মাটি ভেঙ্গে যায়। খরচ কমানোর জন্য অনেকে এই স্লারি ব্যবহার করে না। এতে সিটু পাইলের কোয়ালিটি খারাপ হয়।
রোটারি ড্রিলিং রিগ দিয়ে ভাল মানের সিটু পাইল করা যায়। রোটারি ড্রিলিং রিগ ব্যয়বহুল। ছোট ব্যাসের পাইল এবং কম সংখ্যক পাইল হলে রোটারি ড্রিলিং রিগের পরিবর্তে বাংলা মেথড সাশ্রয়ী কিন্তু বাংলা মেথডে কোয়ালিটি সিটু পাইল করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। সিটু পাইলের নিজস্ব লোড ক্যাপাসিটি অর্থাৎ স্ট্রাকচারাল লোড ক্যাপাসিটি মাটির লোড ক্যাপাসিটির তুলনায় অনেক বেশী যা কাজে লাগানো যায় না। পাইল বেইস গ্রাউটিং (pilebasegrouting.com.bd) করার মাধ্যমে এসব সমস্যার সাশ্রয়ী সমাধান করা যায়। পাইল বেইস গ্রাউটিং করার কারণে পাইলের তলার মাটির ভারবহন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, পাইলের সংখ্যা কমে, খরচ কমে এবং ফাউন্ডেশন ভূমিকম্পসহনীয় হয়।
রিবার কাপলার ব্যবহার
ভূমিকম্পসহনীয় বিল্ডিং বা স্থাপনা বানাতে হলে বীম-কলাম জয়েন্টে রডের সাজানো এবং সবগুলো রডের মাটাম ঠিকমতো করতে হয়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ল্যাপিং অথবা ওয়েল্ডিং এর মাধ্যমে রডের জোড়া দিতে হয় বিম এবং কলামের কিছু নির্দিষ্ট জায়গায়। এই জোড়া বা ল্যাপিং বীম-কলাম জয়েন্টের ভিতরে বা কাছে দেয়া নিষেধ। কিন্তু, বাস্তবে দেখা যায় মিস্ত্রীরা রডের অপচয় কমানোর জন্য রডের জোড়া বীম-কলাম জয়েন্টের ভিতরে বা কাছে করে থাকে। এতে বিল্ডিং ভূমিকম্পের সময় ভেঙ্গে পড়ার ঝুঁকিতে থাকে। রিবার কাপলার ব্যবহার করলে রডের জোড়া দেয়ার জায়গার স্বাধীনতা বৃদ্ধি পায়। এতে বিল্ডিং ভূমিকম্পসহনীয় হওয়ার পাশাপাশি রডের অপচয় রোধের মাধ্যমে খরচও কমে। ভূমিকম্পের সময় রডের বাইরের কনক্রীট অনেক সময় ফাটল হয় অথবা খসে পড়ে। এতে ল্যাপিং এর মাধ্যমে জোড়া দেয়া রড লোড নিতে পারে না। রিবার কাপ্লারের মাধ্যমে জোড়া দেয়া রড এক্ষেত্রে লোড নিতে সক্ষম। তাই, রিবার কাপলার ভূমিকম্পসহনীয় বিল্ডিং নির্মাণে আবশ্যক।
শেষকথা
প্ল্যানার, আর্কিটেক্ট এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ার পরস্পর নলেজ শেয়ারিং, মতবিনিময়, সহযোগিতা, কো-অর্ডিনেশন এবং শ্রদ্ধাবোধের মাধ্যমে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নে যথেষ্ট অবদান রাখতে পারে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।